মাওলানা শহিদুল ইসলাম-এর পিতার ইন্তেকাল, দাফন সম্পন্ন

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মাওলানা শহিদুল ইসলামের পরম শ্রদ্ধেয় পিতা এলাকার প্রবীণ মুরব্বী আহসান নগর গ্রামের আঃ আলিম সানা আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তিনি শনিবার মাগরিবের আজান চলাকালীন সময়ে (৬টা ২০ মিনিটে) নিজ বাড়ীতে ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মরহুমের স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

রবিবার সকাল দশটায় মরহুমের নিজ বাড়িতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজা নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের সুযোগ্য সন্তান কলারোয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মাওলানা শহিদুল ইসলাম।

জানাজা পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর শেখ নুরুল হুদা, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা কামরুজ্জামান, সাতক্ষীরা জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা ওসমান গনি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মোঃ ইমামুল ইসলাম, জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার শওকত আলী, বাগআঁচড়া মহিলা আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল বাশার, সিংহলাল দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মোনায়েম, বসন্তপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল ইসলাম, জালালাবাদ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জে.কাটি দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুল আলিম প্রমুখ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কলারোয়া উপজেলা শাখার সেক্রেটারী মাওলানা শহিদুল ইসলামের পিতার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা রবিউল বাশার ও সেক্রেটারি মাওলানা আজিজজুর রহমান। এক যৌথ শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোআ করেন, আল্লাহ যেন তার নেক আমল সমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতবাসী করেন এবং তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন।

দেশগ্রাম মিডিয়া সেন্টারের কেন্দ্রীয় অফিস ও দেশগ্রাম পোস্ট এর উদ্বোধন

জুন ১৯, ২০২৩ ০ comments deshgrampost

দেশগ্রাম মিডিয়া সেন্টারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশগ্রাম পোস্ট ডট কম এর উদ্বোধন গতকাল ১৮ জুন রাজধানী ঢাকার ৪৫ পশ্চিম হাজীপাড়া (২য় তলা), মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুন। দেশগ্রাম মিডিয়া সেন্টারের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মাহ্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচক পীরজাদা আল্লামা খন্দকার শহীদুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সংগঠক,সমাজসেবক, দানবীর লোকমান হেকিম এবং ব্যবসায়ী, সমাজসেবক,সংগঠক আজিজুল ইসলাম রিপন।

সংগঠক ও উপস্থাপক সাহাব উদ্দিন শিহাবের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক রকিবুল হাসান রিজন, রাজনীতিবিদ সংগঠক কবি মাহমুদুর রহমান ওয়াহাব, সমাজসেবক ফোরকান মিয়া, সাংবাদিক সুজম হাসান শর্ত, মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং শহীদুল ইসলাম শাহীন।

উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মোল্লা বাহাউদ্দিন বাপ্পি, হাসান মাহমুদ জয়, নিগমানন্দ রায়, আলামিন, মালা চৌধুরী, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মিজানুর রহমান এবং মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অথিতি পীরজাদা শহীদুল হারুন বলেন, সাংবাদিকতার লিখণীর মাধ্যমে সরকারের সাফল্যের এবং ব্যর্থতার দিক তুলে ধরতে হবে। দেশগ্রাম মিডিয়া সেন্টারের সকল সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য তিনি আহ্বান করেন। দেশ এবং জাতির কল্যাণে দেশগ্রাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা কামাল মাহ্দী বলেন, দেশগ্রাম মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, বিনোদন, সংস্কৃতি, সাহিত্য, মানুষের জীবনবোধ এবং দেশ ও জাতির কথা তুলে ধরে আগামীর সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পাশে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আলাউদ্দিন হোসেন এর কবিতা

জুন ১৭, ২০২৩ ০ comments deshgrampost

আলাউদ্দিন হোসেন

আম কুড়ানো
কে কে যাবি আম কুড়াতে
আমার সাথে আয়
দূর আকাশে মেঘ ডাকছে
ঝড় আসবে গাঁয়।

গাঁয়ের পথে আমের বাগান
আমরা সেথায় যাবো
তাড়াতাড়ি আয় রে তোরা
পাকা আম খাবো।

সবাই মিলে আম কুড়ানো
ভরে যাবে মন
আম কুড়িয়ে ভাগাভাগি
হবে জনে জন।

****

গ্রীষ্মকাল
গাছে গাছে ফল পেকে
হয়ে আছে লাল
ফলের ঘ্রাণে মন ভরে
এখন গ্রীষ্মকাল।

মাঠ-প্রান্তর ছেয়ে গেছে
সোনা রঙের ধানে
কৃষাণ-কৃষাণী আত্মহারা
জ্যৈষ্ঠ মধুর ঘ্রাণে।

প্রকৃতিজুড়ে প্রচণ্ড খরা
সূর্যে অনেক তাপ
গরম পোহাতে ছেলেমেয়েরা
গাঙে পাড়ছে ঝাঁপ।

****

ফলের ঋতু
গ্রীষ্মকালে বাংলায় আসে
আমের সাথে জাম
ধানের গন্ধে মাঠ-প্রান্তর
কৃষক ঝরায় ঘাম।

বাঙ্গি আসে লিচু আসে
তরমুজেতে জল
জাতীয় ফল কাঁঠাল আসে
আসে নানা ফল।

আনারসের মিষ্টি রসে
জুড়ায় দেহ-প্রাণ
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে
মিষ্টি আমের ঘ্রাণ।

জান্নাতুল নাঈমের কয়েকটি কবিতা

জুন ১৭, ২০২৩ ০ comments deshgrampost

শেষ চিঠি

যদি কখনো আমি ফিরে না তাকাই
যদি কখনো ক্ষুদেবার্তা তোমার ঠিকানায় না যায়
জীবনের রোদ্দুর পথে তোমায় না বলি, আছো?
ভীতু কণ্ঠ নিয়ে না বলি, আচ্ছা
তবে ভেবে নিও
আমি আর কোথাও নেই
আমি আর ভালোবাসায় নেই।

যদি আমি তোমার কাছে থাকার কারণ না খুঁজি
যদি তোমার পথে কোথাও না থাকি
পথের ঠিকানায় তোমার মুখ না খুঁজি
তোমার ফোন কলে আর হার্টবিট না বাড়ে
তবে বুঝে নিও
আমি আর কোথাও নেই
আমি আর অপেক্ষায় নেই।

যদি আমি আর আনন্দে পুলকিত না হই
যদি কান্নায় জল না আসে
তোমার থাকা না থাকায় নিশ্চিন্ত আরামে থাকি
নীরবতায় খুব করে ডুবে যাই
তবে বুঝে নিও
আমি আর কোথাও নেই
আমি আর প্রিয় আপনি শব্দে নেই।

তবে ভেবে নিও শেষ চিঠি পৌঁছে গেছে
সব চিঠি আকাশে ভাসবে উড়বে
প্রেরকের ঠিকানা সেদিনই পাল্টাবে
আমি আজই শেষ চিঠি লিখছি
শেষ চিঠি তোমার গন্তব্য খুঁজছে।

****

ভালো থেকো

তুমি তো জানো না
কতটুকু ব্যথার পর আমি ফিরে এসেছি
কত অশ্রুজলের স্রোতে ভেসেই তোমার নাম ভাসিয়েছি
কত রাত জাগার পর যুদ্ধ করেই আরামে ঘুমাচ্ছি
প্রত্যাখ্যানের কাছে তোমাকে রেখে,
আমি শূন্যতায় ফিরে এসেছি

তুমি তো জানো না
কতটা স্নায়ুযুদ্ধ করে নিজেকে থামিয়েছি
কতকাল ধরে তোমার নামে শ্রাবণ হয়ে আজি থেমেছি
কান্নাদের বুকে চেপেই তোমার সম্মুখে হেসেছি
মুক্ততায় তোমায় ছেড়ে দিয়ে,
আমি নিজের কাছেই ফিরে এসেছি।

তুমি ভালো থেকো
আজ থেকে আমি আর কোথাও নেই
শেষ চিঠি তোমার দুয়ারে কড়া নাড়ছে
তুমি তা গ্রহণ করো।

****

ভুলে যেও

তুমি সবই ভুলে যেও
যা কিছু বলেছি সবই ভুলে যেও
তুমি কেবলি মনে রেখো মেঘের আকাশের গর্জন
শহরের আনাচেকানাচের বৃষ্টির পথের দৃশ্য
ভোর-সকালে দোয়েল পাখির নৃত্য
বাকি সব মনে রেখো
আমার সব কথা ভুলে যেও।

তুমি সবই ভুলে যেও
যা কিছু চিঠি দিয়েছি ভাসিয়ে দিও
তুমি কেবলি মনে রেখো আঁধারের পথ
নদীর জলে ভেসে থাকা ফুল
ভোর-সকাল কুয়াশায় ঢাকা সকাল
বাকি সব মনে রেখো
আমি নামের কেউ তোমাতে চেয়েছি ভুলে যেও।

চেয়ে দেখো,
আমি তো কেবলি শূন্যতা
আমি তোমার কোথাও নেই
আমি তোমার কিছুতেই নেই।

সৌমেন্দ্র গোস্বামীর গল্প: বিষ বৃত্তান্ত

জুন ১৭, ২০২৩ ০ comments deshgrampost

বাবা অসুস্থ হওয়ার পর গ্রামের বাড়িটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু স্কুলের জন্য হয়নি। রিটায়ারমেন্টের পর স্কুলটি নির্মাণ করেন বাবা। ঠাকুমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখেন ‘আনন্দময়ী সাংস্কৃতিক স্কুল।’

আট মাস হলো বাবা নেই। আকাশের তারা হয়ে গেছেন। আগে স্কুল নিয়ে আমাকে ভাবতে হতো না। বাবাই সবটা দেখতেন। এখন স্কুলের বিষয়েও অনির্বাণ কাকুকে সময় দিতে হয়। ভদ্রলোক বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক স্কুলের পরিচালক। আগে বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে স্কুলের ভালো-মন্দ সিদ্ধান্ত নিতেন। এখন প্রায় আমাকে ফোন করেন। স্কুলের প্রসঙ্গ ছাড়াও নানা বিষয়ে কথা হয়। কিন্তু কাকু যে হঠাৎ দেখা করতে আসবেন, ভাবতে পারিনি। বাবা বেঁচে থাকতে বহুবার আসার কথা বলেছেন। তিনি আসেননি। এককথা তার, ‘ট্রাফিক জ্যাম, ধুলো, মানুষের গিজগিজে ঠাসা শহর আমার ভাল্লাগে না। একদণ্ডও মন এখানে দাঁড়ায় না।’

নিজেকে সামলে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। তারপর নানা কথা হতে হতে আলাপ জমে উঠল। একপর্যায়ে হঠাৎ আসার প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন কাকু। একটা আবদার নিয়ে এসেছেন। রবীন্দ্র উৎসবে আমাকে যেতে হবে। বাবা যেতেন, উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করতেন। কাকুর ইচ্ছা, এ বংশের উত্তরাধিকারের হাতেই স্কুলের প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজনের উদ্বোধন হবে। যতদিন দায়িত্বে আছেন, অন্যথা হতে দেবেন না।

আমি শুভাশিস কর্মকার। পেশায় ব্যবসায়ী। বয়স পঁয়ত্রিশ। বিবাহিত। সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। আজ এ মিটিং কাল সে মিটিং লেগেই থাকে। দম ফেলার ফুসরত পাই না। তারপরও কাকুর মুখের উপর ‘না’ করতে পারলাম না। আসলে কিছু মানুষ থাকে জীবনে যাদের জন্য, যাদের কথা ভেবে অনেক কঠিন কিছুও হাসিমুখে মেনে নিতে হয়। অনির্বাণ কাকুও তেমন। আমার জীবনে ভূয়সী অবদান তার। বাবার পর এই মানুষটার কাছেই সবচেয়ে বেশি ঋণী আমি। কেউ কেউ অতীতের কথা স্বীকার করতে লজ্জা পান। আমার সে সমস্যা নেই। নির্দ্বিধায় বলতে পারি।

সেদিন কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেননি। বাবার বিন্দুমাত্র দোষ ছিল না। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দুর্নীতি সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। হুমকি-ধামকি দিয়েও নিজেদের দলে ভেড়াতে না পেরে অফিস কলিগদের একাংশ ষড়যন্ত্র করে বাবাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। বাবা নিরুপায়। কিছু করার নেই। সৎ-অসতের যুদ্ধ হলে অসতের পক্ষেই লোক বেশি হয়। নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত শুরু হলো। সেই সময় আমার স্কলারশিপ প্রায় চূড়ান্ত। নির্দিষ্ট টাকা জমা করার দিন ঘনিয়ে এলো। তদন্তের স্বার্থে মা-বাবার ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে না। সম্পদ-সম্পত্তি বিক্রির উপরও ছিল নিষেধাজ্ঞা।

আত্মীয়-স্বজনদের প্রত্যেকে এবং তারাও যারা নিয়মিত বাবা-মায়ের কাছে হাত পাততেন, সবাই হাত গুটিয়ে নিলেন। শেষমেশ কোনো দিশা না দেখে অনির্বাণ কাকুকে সবটা জানালেন বাবা। বিনা বাক্য ব্যয়ে নিজের পৈতৃক ভিটা-মাটি বন্দক রেখে কাকু টাকার ব্যবস্থা করলেন। দেশের বাইরে যাব, চিন্তিত বিষণ্ন আমি। যন্ত্রণাময় যন্ত্রের মধ্যে বাবা-মাকে একা ফেলে কেমন করে যাই! সৃষ্টিকর্তা মহান। বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগেই ঝামেলা মিটে যায়। অসীম ক্ষমতা সত্যের, একদিন না একদিন সে-ই জয়ী হবেই। তার চেয়েও বড় কথা, হাজারো অসতের ভিড়ে একজন হলেও সৎ মানুষ থাকে। তেমনই দুই-একজন মানুষের বদান্যতায় তদন্তে দোষীদের শাস্তি হয়। সসম্মানে চাকরিতে যোগ দেন বাবা। কাকুকেও টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সব আবার আগের মতো হয়ে যায়। কিন্তু কাকুর সেদিনের ঋণ, কোনো কিছুর বিনিময়েই কি শোধ করা সম্ভব! ইত্যাদি ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতি মেনে নিয়েই রবীন্দ্র উৎসবে যেতে রাজি হই।

২২ শ্রাবণ। পৃথিবীর বরপুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম/নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম।’ শিক্ষার্থীদের দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্দা উঠল। আমার দুই চোখ জলে টলমল। কাকু কানের কাছে মুখ এনে বললেন, ‘কাঁদে না। বাবার জন্য প্রার্থনা করো।’ প্রারম্ভিক বক্তৃতায় উপস্থিত গণ্যমান্যদের কেউ কেউ বললেন, ‘ছেলে একেবারে বাবার মতো হয়েছে। নীড় বিরাগী পাখির মতো সমুজ্জল সুন্দর মানুষ। চারদিকে যেন ওই সুন্দরের চাকচিক্যই ঠিকরে পড়ছে।’ কথাগুলো শুনে ভীষণ অপরাধী মনে হলো নিজেকে। ডাহা মিথ্যে কথা, মোটেই বাবার মতো হইনি আমি। এ প্রশস্তি আমার প্রাপ্য নয়।

মানুষের জন্য বাবার মন কাঁদতো। বাবা মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তাছাড়া বাবা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে একটি চিঠি লিখে গেছেন– ‘স্নেহাস্পদেষু সুজয়,

প্রত্যেক মা-বাবা সাধ্যমতো সন্তানকে তৈরি করার চেষ্টা করে। আমি আর তোমার মা-ও ব্যতিক্রম নই। আমরাও চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি কি পারিনি সে বিচার সময় করবে। শুধু এতটুকু খেয়াল রেখ, একজন মানুষও যেন তোমার দিকে আঙুল না তোলে। তোমাকে যেন কখনো মাথা নিচু করতে না হয়। শুধু উপদেশ দিতে ভাঙা ভাঙা অক্ষরে শেষ সময়ে চিঠি লিখছি না। আমার একটি স্বপ্ন তুমি পূরণ করবে। ধরে নিয়ো এটিই তোমার কাছে তোমার বাবার একমাত্র চাওয়া। হ্যাঁ, নিজেই কাজটা করে যেতে পারতাম, কিন্তু তুমি যদি অসন্তুষ্ট হও, জীবন সায়াহ্নে সন্তানের সঙ্গে মতবিরোধ হোক–এ আমি চাইনি। যা হোক, গ্রামে আমাদের যতটুকু যা আছে ভীষণ বিপদের দিনেও ওইদিকে নজর দিয়ো না। খাতা-কলমে না হলেও মন থেকে গ্রামের সমস্ত সব স্কুলের জন্য দিয়ে গেলাম। স্কুলটাকে তুমি বাঁচিও। নিজের জ্ঞান, দূরদর্শিতা দিয়ে সাজিও। অনির্বাণের যেন কখনো অসম্মান না হয়। সবাই যেন তোমাকে ভালোবাসে। আমি অতিদূর থেকেও যেন তোমার জয়ধ্বনি শুনতে পাই।’

যে চিঠির কথা কাউকে জানাইনি আমি। প্রায় বিষয়টা নিয়ে ভাবি, বাবা নিজে খাতা-কলমে কেন কাজটি করলেন না। দূরদর্শী মানুষ, সন্তানকে চিনতে ভুল হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই বুঝেছিলেন, অর্থ উপার্জনের নেশায় মানুষ হওয়ার সমীকরণে এক্স-ওয়াই-জেড যে কোনো একটি চলকের মান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। আমি পুরোপুরি মানুষ হয়ে উঠিনি। আমার জীবনের অনেকটাই রয়ে গেছে ফাঁকি।

বরষার প্রথম দিনে

জুন ১৭, ২০২৩ ০ comments deshgrampost

জ্যৈষ্ঠ শেষ হলো, বরষার প্রথম দিন আজ। মানুষের মতোই প্রকৃতিও কাঁদে বলেই কি বর্ষা আসে? নাকি ভিজিয়ে দিতে, শীতল করতে আসে তপ্ত ধরাকে! সম্প্রতি যে অসহ্য গরম সহ্য করেছে দেশবাসী, প্রথমে বৃষ্টির ধারণা এবং পরে বৃষ্টি এসে হাওয়ায় যে শীতলতা ছড়িয়েছে তারপরই না হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরা। ফলে প্রকৃতির কান্নার মতোই বর্ষা স্বস্তিরও নাম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষা তথা আষাঢ়-শ্রাবণের যে রূপ, তার তো আর তুলনা নেই। বর্ষা নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা লিখেছেন অগণিত গান ও কবিতা। আবেগে আপ্লুত হয়ে বিশ্বকবি বর্ষার প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে লিখেছেন, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে, জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।’

কিছুতে মন না লাগা রবীন্দ্রনাথ এই বাংলার নদী পদ্মার বুকে পদ্মাবোটে বসে বর্ষার রূপমুগ্ধ হয়েছেন, লিখেছেন ‘সোনার তরী’র মতো অসামান্য কবিতা। লিখেছেন ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে’। বাংলাদেশের বর্ষার রূপ বর্ণনা করেই লিখেছেন “আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।/ ঝরো-ঝরো ধারে ভিজিবে নিচোল,/ ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল/ ওই বেণুবন দোলে ঘন ঘন/ পথপাশে দেখ্ চাহি রে॥/ শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, এ সময়ের কবি মারজুক রাসেলও লিখেছেন ‘বৃষ্টি তোমার পায়ে ধরি, অন্য কোথাও পড়ো, আমাদের এই সকাল দুপুর কেন নষ্ট করো’।

আকাশভরা রবীন্দ্রনাথের দেশে নীল গগনে কালো মেঘের চোখ রাঙানিতে বৃষ্টির রাজত্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার সেভাবে এখনো অঝোরধারায় আকাশ কাঁদিয়ে বর্ষারানী তার আগমনের বার্তা পৌঁছে দেয়নি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে। তবে মাঝেমধ্যেই আকাশ আঁধার করে নতিজা দেখানো শুরু করেছে। এখন চলতি পথে ছাতা কিংবা বর্ষাতি নিয়ে বের হতেই হবে সচেতন কাউকে, যিনি হুট করে বৃষ্টিতে ভিজতে চান না।

বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায় তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে-শ্যামলে। শুধু কি তাই, বর্ষার আগমনে গাছে শোভাবর্ধন করে কদম ফুল। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম গর্জনে ময়ূর নাচে পেখম তুলে।

ঋতুবৈচিত্র্যের ষড়ঋতুর দেশের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে, আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়, সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়, কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয় হুমায়ূন আহমেদের কথায় মকসুদ জামিল মিন্টুর সুর করা এ গান গাইতে গাইতে হৃদয়ের কথা জানাতে না পারা প্রেমিকার কথা ভাবেনি আর কোন প্রেমিক! বরষা তাই প্রেমেরও মোক্ষম ঋতু কবি আবুল হাসান তো লিখেছিলেনই, বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসায়, বৃষ্টি হলেই না সেরকম সারা দিন হৃদয়ের অক্ষরভরা উপন্যাস পড়া যায়।

এমন রোমান্টিক বৃষ্টির কারণে বিপদেরও কিন্তু শেষ নেই। সবচেয়ে বড় বিপদ নিম্ন আয়ের মানুষদের। প্রতিদিন কাজে যাওয়া ও ফেরার বাইরে দিনমজুরদের কাজও যাবে কমে ভয়ানকভাবে, ফলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়বে, কাজ বাড়বে পুলিশ বিভাগের। আর বর্ষা এলেই দেখবেন কাজকর্ম বেড়ে যায় আমাদের সড়ক বিভাগের। মানে রাস্তার কাটাকুটি দুর্ভোগও বাড়বে এ বর্ষায়। সীমিত আয়ের মানুষদের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করা টাকায় ভাগ বসাবে হুট করে বৃষ্টি এড়াতে ব্যবহার করা যানবাহন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, গাড়ির বিলাস যারা নিতে পারেন না, তারা অপেক্ষা করবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন বৃষ্টি ধরে আসবে, কখন বাড়ি পৌঁছে পরিবারের সান্নিধ্যে যাবে সারা দিন কামলা খাটা মানুষ।

বৃষ্টিতে মোহনীয় হয়ে উঠুক পুরো বর্ষা আষাঢ় ও শ্রাবণ। আবেগে ভরে বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।

আহারে বর্ষা, বৃক্ষ ফসলের জন্য ভয়াবহ অথচ প্রয়োজনীয় বর্ষার এই জল, কিন্তু নগরে যে বৃষ্টি হবে, যে নগরে আয়-ব্যয়ের এত বৈষম্য, এত পার্থক্য সে নগরের বৃষ্টির রঙ কি কখনো কখনো হয়ে উঠবে না লাল? সেই বৃষ্টির রঙ কি আমরা ক্রমাগত প্রতিদিন মেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকব?

Hello world!

জুন ১১, ২০২৩ one comment deshgrampost

Welcome to WordPress. This is your first post. Edit or delete it, then start writing!